,

টাকা ছাড়া কাজ হয় না কোটালীপাড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসে

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে টাকা ছাড়া কোন কাজ হয় না বলে অভিযোগ উঠেছে। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের জিম্মি করে এ অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা টাকা আদায় করে থাকেন বলে জানা গেছে।

টাকা না দিলে শিক্ষকদের মাসের পর মাস হয়রানির শিকার হতে হয়। বাধ্য হয়েই শিক্ষকরা টাকা দিয়েই এ অফিস থেকে কাজ করিয়ে নেন। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, সুপার, প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে মোটা অংকের টাকা আদায় করা হয়।

শিক্ষা অফিসের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কোটালীপাড়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে অযোগ্যরা প্রতিষ্ঠান প্রধানের পদ অলংকৃত করছেন। এতে করে কোটালীপাড়ায় শিক্ষার মান নিন্মগামী হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। শিক্ষক, কর্মচারীদের নতুন বেতন বিলের কাগজপত্র কোটালীপাড়া উপজেলা থেকে জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠাতে শিক্ষক, কর্মচারী প্রতি ১০ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার একাধিক প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করে সমকালকে জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর শিক্ষকের শূণ্য পদের তালিকা এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে উপজেলা শিক্ষা অফিস প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে টাকা নেয়। এরপর  এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ স্কুলের শূণ্যপদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়। স্কুল ম্যানেজিং কমিটি এ নিয়োগ অনুমোদন দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসে পাঠায়। এসব শিক্ষকদের বেতন বিলের কাগজ জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠাতে শিক্ষক প্রতি ১০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। ওই অফিসের অফিস সহকারী হান্নান সরদারের মাধ্যমে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মাহাবুবুর রহমান এ টাকা আদায় করেন। কোন কোন ক্ষেত্রে আরো বেশি টাকা আদায় করা হয়।

কোটালীপাড়া উপজেলার হিজলবাড়ী বিনয়কৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন নিয়োগ পাওয়া ৫ শিক্ষকের কাছ থেকে ৭০ হাজার, হিরণ পঞ্চপল্লী উচ্চ বিদ্যালয়ের ২ শিক্ষকের কাছ থেকে ৪০ হাজার ও পোলসাইর ত্রিপল্লী উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষকের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে অযোগ্যদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা অফিসার প্রায় ৮ বছর ধরে এ উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন। প্রধান শিক্ষকরা দুর্নীতিবাজ শিক্ষা অফিসারের অপসারণ দাবি করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী এক শিক্ষক সমকালকে বলেন, ‘আমি নতুন নিয়োগ পেয়েছি। আমার বেতন বিলের কাগজ দেরিতে পাঠালে ৩ মাসের বেতন অন্তত ৪৮ হাজার টাকা পাবো না। এ ভয় দিয়ে ওই অফিসের সহকারী হান্নান সরদার আমার কাছ ১০ হাজার টাকা নিয়ে বেতন বিলের কাগজ  গোপালগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠিয়েছেন। প্রত্যেক কাজেই তাদের টাকা দিতে হয়। টাকা ছাড়া এখানে কোন কাজ হয় না। এখানে শিক্ষকরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন।’

কোটালীপাড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মাহাবুবুর রহমান টাকা আদায়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘এখানে বেতন বিল জেলা শিক্ষা অফিসে প্রেরণসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল কাজ রয়েছে। এসব কাজে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। অনেক কাগজ পাঠাতে হয়। এ কারণে অনেক শিক্ষক খুশি হয়েই অফিসের কর্মচারীদের মিষ্টি খেতে কিছু টাকা দিয়ে থাকেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দেয় স্কুল ম্যানেজিং কমিটি। অযোগ্য প্রতিষ্ঠান প্রধান ম্যানেজিং কমিটি নিয়োগ দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে  তারা আমাকে কিছু সম্মানী দেন মাত্র।’ নানাবিধ কাজে ব্যাস্ত থাকায় তিনি সার্বক্ষণিক অফিস করতে পারেন না বলেও স্বীকার করেন ।

এই বিভাগের আরও খবর